- কানাইঘাটে ‘প্রভাতী সমাজ কল্যাণ যুব সংঘ’র ফ্রি চক্ষু ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
- কানাইঘাটে ফের হত্যাকান্ড || দোকান থেকে আইসক্রিম বিক্রেতার লাশ উদ্ধার
- বৃহত্তর জৈন্তিয়া কল্যাণ পরিষদের আহবায়ক কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত
- ইকরা ট্রাভেলস-সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন
- ২৩ নভেম্বর সিলেটে জমিয়তের গণসমাবেশ সফল করুন: সিলেট জমিয়ত
- খুনিকে গ্রেফতারে পুলিশের চিরুনী অভিযান|| কানাইঘাটে বন্ধুর হাতে নিহত মুমিনের দাফন সম্পন্ন
- কানাইঘাটে বন্ধু কেড়ে নিল বন্ধুর প্রাণ
- শাহজালাল উপশহরে দারুল আজহার মডেল মাদরাসার বিজ্ঞান মেলা অনুষ্টিত
- লিবিয়ায় নিখোজ ফারহানের সন্ধান চেয়ে কানাইঘাট প্রেসক্লাবে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন
- জৈন্তিয়াবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় “বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদ” গঠিত
» সিলেটে কিশোর গ্যাং : পিতা, আপনার ছেলেকে থামান
প্রকাশিত: ২০. জুলাই. ২০২০ | সোমবার
সাইফুল আলম::
অধুনা চারপাশে ঝড় তোলা দুটি শব্দ ‘কিশোর গ্যাং’। সম্প্রতি সিলেটসহ সারা দেশে অলি-গলিতে গড়ে ওঠা এমন অসংখ্য ‘গ্যাং’র বিচরণ, দৌরাত্ম্য ও আগ্রাসন। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়েসি ছেলেরাই এমন ‘গ্যাং’র নিয়ন্ত্রক ও সদস্য। এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন এলাকার কথিত বড় ভাইয়েরা।
রাস্তায় চলার পথে পাশ দিয়ে বিকট শব্দে সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল যাচ্ছে, চালক কিশোর বয়সের কোনো ছেলে- পরনে হাফ প্যান্ট, চুলগুলো বিচিত্র রং ও স্টাইলের- আপনি সহজেই বুঝে নিতে পারবেন সে কোনো না কোনো গ্যাং-এর সক্রিয় সদস্য। ইতোমধ্যে কিশোরটির পা পড়েছে পিচ্ছিল ও অন্ধকার জগতে। সে ছুটছে চারপাশ কাঁপানো তার মোটরসাইকেলের মতই মরণগতিতে, তাকে সুস্থ ও আলোর পথে ফেরানো বেশ কঠিন। তবে অসাধ্য নয়। আর এর জন্য মা-বাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকা প্রয়োজন। এ লেখার মূল আলোচ্যবিষয় এটাই।
সাধারণত কিশোর (১৩-১৮ বছর) বয়েসি ছেলেদের সংঘবদ্ধ দলকে ‘কিশোর গ্যাং’ বলা হয়। প্রায় প্রতিটি গ্যাংয়ের একটি নির্দিষ্ট নাম ও লোগো থাকে। গ্যাং সদস্যরা সেই নাম ও লোগো শরীরে ট্যাটু করে রাখে। স্প্রে দিয়ে দেয়ালে দেয়ালেও লিখে রাখে তারা। এলাকায় প্রভাব বিস্তার, মারপিট, মাদকদ্রব্য সেবন, ইভিটিজিংসহ সকল ধরনের অপরাধই তাদের দ্বারা সংঘটিত হয়। তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘কিশোর গ্যাং’ নিয়ন্ত্রণ ও এর প্রচার-প্রচারণা সহজ করে দিয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতরা গ্যাং নিয়ে গর্ববোধ করে এবং গ্যাং সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে তৃপ্ত হয়। অনেক সময় গ্যাংয়ের সব সদস্য একই রকমের জামাকাপড় পরে। হেয়ার স্টাইলও থাকে একই রকম। কেউ কেউ অথবা সবাই জুয়েলারি ও অলংকার পরিধান করে থাকে। সবচাইতে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে- এসব গ্যাংয়ের বেশিরভাগ সদস্য নিজেদের সঙ্গে এবং সংগ্রহে ছুরি, রামদা, হকিস্টিক- এমনকি আগ্নেয়াস্ত্রও রাখে।
আমাদের দেশে ২০১৭ সালে রাজধানী ঢাকার উত্তরায় আদনান হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে ‘কিশোর গ্যাং’র সহিংসতার নির্মমতা জনসম্মুখে উন্মোচিত হয়। আর বিশ্বে ‘কিশোর গ্যাং’র বিষয়টি ফলাও হয় ১৯৭০ সালের দিকে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা গেছে, সিলেটে নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় কিশোর গ্যাং। জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও রয়েছে এমন গ্যাং। কোনো কোনো এলাকায় রয়েছে এমন একাধিক গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তার ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রায়ই এসব গ্যাংয়ের কিশোররা জড়িয়ে পড়ে সংঘাতে। এক গ্রুপের সদস্যকে অন্য গ্রুপের সদস্যরা তুলে নিয়ে মারধর, পাল্টা প্রতিশোধ- এসব ঘটনা এখন সিলেটের নিত্যদিনের।
গত ২ মে নগরভবনে হামলা চালায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। ওই হামলায় অংশ নেয় শতাধিক কিশোর। নগরভবন লক্ষ্য করে তাদেরকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। সিটি করপোরেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এ দৃশ্য ধরা পড়েছে। জানা গেছে, রিকশাচালকদের পক্ষ নিয়ে হামলার জন্য একটি মহল কয়েকটি কিশোর গ্যাং ভাড়া করেছিল।
এর আগে ৩১ জুন রাত সাড়ে ৯টায় দক্ষিণ সুরমার নভাগ গ্রামের হেলাল উদ্দিনের কিশোর ছেলে তৌফিকুল ইসলাম তামিমকে বাড়ি থেকে ডেকে বের করে দুই কিশোর। বাড়ির রাস্তায় বের হওয়ার পর আরও ৬ কিশোর ঘিরে ধরে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তামিমের শোরচিৎকার শুনে তার মা-বাবা ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ওই ৮ কিশোরকে আটক করেন। তাদেরকে ছাড়িয়ে নিতে আরও ৮ কিশোর এগিয়ে আসলে তাদেরকেও আটক করে স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই ১৬ কিশোরকে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন সকাল সাড়ে ১১টায় স্বজনদের জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
গত ২৭ মে রাতে সিলেট নগরীর নয়াসড়ক কিশোরী মোহন স্কুলের সামনে থেকে দুই কিশোরকে অপহরণ করে কিশোর গ্যাংয়ের ১০-১২ জন সদস্য। পূর্ব জিন্দাবাজার আসার পর স্থানীয় লোকজনের প্রতিরোধের মুখে অন্যরা পালিয়ে গেলে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
এরকম কিশোর গ্যাং নগরীরর আম্বরখানা, বড়বাজার, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, কাজিটুলা, কুমারপাড়া, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, নয়াসড়ক, মিরাবাজার, ভাতালিয়া, লামাবাজার, মেডিকেল রোডসহ বিভিন্ন স্থানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
গেল কয়েকদিন আগে নগরীর আম্বরখানা ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকায় একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপর এক গ্রুপের উপর হামলা চালায়। পরদিন পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় এক কিশোর ও তার বাবাকে বেধড়ক মারধর করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ তো মাত্র সাম্প্রতিক কয়েকদিনের ঘটনা। আরও অনেক ঘটনাই আছে- যেগুলো গণমাধ্যম পর্যন্ত আসার সুযোগ হয় না। সে কারণে খবর হিসেবে প্রকাশও পায় না।
এছাড়াও নিকট অতীতে সিলেটে কিশোর গ্যাং খুনসহ ঘটিয়েছে অনেক বড় বড় অপরাধ কর্মকাণ্ড। দিন দিন এদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে বৈ কমছে না।
সমাজের কঠিন এ সমস্যার সমাধান কী? সমাধানও কঠিন, তবে অসাধ্য নয়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বেপরোয়া কিশোরদের পরিবার। অসুস্থ জগতের দিকে পা বাড়ানো, বিপথগামী কিশোরকে আলোর পথে ফেরাতে পারেন তার মা-বাবা, বড় ভাই-বোন। বিশেষ করে বাবা। ভূমিকা রাখতে পারা নয়, রাখাটা অত্যাবশ্যকীয়। তা না হলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের দ্বারা নিজের বাবা-ভাই খুন, নিজেরই মা-বোন ধর্ষিতা- অদূর ভবিষ্যতে পত্রিকার পাতায় এমন খবর ছাড়া আর কোনো সংবাদই ঠাঁই পাবে না!
কী করতে পারেন এক দিকহারা কিশোরের পিতা? তাঁকে অনেক কিছুই করার আছে। তিনি জন্ম দিয়েছেন যে সন্তানকে, তিনিই সে সন্তানের নিয়ন্ত্রক। যখনই দেখবেন তাঁর সন্তান হাফপ্যান্ট পরে, হাতে বালা কানে দুল পরে, জংলি ডিজাইনে চুল কেটে, সে চুলে বিচিত্র রং মেখে, মোটরসাইকেলের সাইলেন্সার খুলে বিকট শব্দে বাড়িতে প্রবেশ করছে এবং বের হচ্ছে- তখনই সর্বপ্রথম বিপথগামী ওই কিশোর সন্তানকে আটকানোর দায়িত্ব তার পিতার।
প্রথমে অন্তত দু-তিনবার ছেলের সামনে ধর্মীয় অনুশাসন এবং সামাজিক সভ্যতার দিকগুলো তুলে ধরে তাকে কাউন্সিলিং করবেন সচেতন পিতা। ছেলে তাতে কান না দিলে নিকটস্থ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কাউকে দিয়ে তাকে বুঝান। তাতে কাজ না হলে আপনার ছেলেকে শাসনের আওতায় নিয়ে আসুন এবং ধীরে ধীরে শাসনের মাত্রা বাড়িয়ে দিন। তাতেও কাজ না হলে বুঝতে হবে আপনার ছেলে ইতোমধ্যে সভ্য সমাজে থাকার অধিকার হারিয়েছে। তার ভেতর থেকে উধাও হয়েছে মা-বাবার পরিচয়, ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ ও ভাবাবেগ, সামাজিক মূল্য মূল্যবোধ- সর্বোপরি মনুষ্যবোধ। এ পর্যায়ে সমাজের জন্য বিপজ্জনক এক কিশোরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়াই পিতার নৈতিক দায়িত্ব এবং অপরিহার্যতা।
পিতা, আপনার মনে রাখা একান্তই দরকার- আপনার সুসন্তান পরিবার, সমাজ তথা দেশের সম্পদ। গর্ব। উন্নতির উপকরণ। আর আপনার উচ্ছন্নে যাওয়া সন্তান পরিবার, সমাজ তথা দেশের জন্য প্রলয়ঙ্করী ঝড়। তাকে যে কোনোভাবে, যে কোনো মূল্যে থামান। আপনার ছেলেকে টেনে তুলুন ধ্বংসের গহ্বর থেকে, আর ‘কিশোর গ্যাং’ নামক অভিশাপ থেকে বাঁচান পুরো সমাজকে।
লেখক : সাংবাদিক
সর্বশেষ খবর
- কানাইঘাটে ‘প্রভাতী সমাজ কল্যাণ যুব সংঘ’র ফ্রি চক্ষু ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
- কানাইঘাটে ফের হত্যাকান্ড || দোকান থেকে আইসক্রিম বিক্রেতার লাশ উদ্ধার
- বৃহত্তর জৈন্তিয়া কল্যাণ পরিষদের আহবায়ক কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত
- ইকরা ট্রাভেলস-সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন
- ২৩ নভেম্বর সিলেটে জমিয়তের গণসমাবেশ সফল করুন: সিলেট জমিয়ত
সর্বাধিক পঠিত খবর
- কানাইঘাটে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত, গ্রেফতার-১
- ফের বাংলাদেশ থেকে ব্রিটিশ ভিসা দেওয়া শুরু, রয়েছে নানা শর্ত
- আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি মাহফুজের, ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম
- কানাইঘাটে পরকীয়ায় বাঁধা দেয়ায় যুবককে কুপিয়ে আহত,থানায় অভিযোগ দায়ের
- কানাইঘাটে ৫০ উর্ধ্ব মহিলার যৌন হেনেস্থার ভিডিও যে ভাবে ধারণ করে বখাটেরা
এই বিভাগের আরো খবর
- কানাইঘাটে ‘প্রভাতী সমাজ কল্যাণ যুব সংঘ’র ফ্রি চক্ষু ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
- কানাইঘাটে ফের হত্যাকান্ড || দোকান থেকে আইসক্রিম বিক্রেতার লাশ উদ্ধার
- বৃহত্তর জৈন্তিয়া কল্যাণ পরিষদের আহবায়ক কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত
- ইকরা ট্রাভেলস-সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন
- ২৩ নভেম্বর সিলেটে জমিয়তের গণসমাবেশ সফল করুন: সিলেট জমিয়ত