সর্বশেষ

» সিলেটে ভাড়া নিয়ে বাড়িওয়ালাদের বাড়াবাড়ি

প্রকাশিত: ৩১. মে. ২০১৭ | বুধবার

সাইফুল আলম: সিলেট নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদ আলী সোহাইল। এক বছরে দুই দফায় ভাড়া বৃদ্ধির কারণে বাধ্য হয়ে বাসা বদলে এখন তিনি থাকছেন নগরের পাঠানটুলায়।

নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাসায় উঠেছিলাম ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে। কয়েক মাস যেতে না যেতে নতুন বছরের (২০১৬ সাল) ফেব্রুয়ারিতে এসে ভাড়া বাড়িয়ে দেন বাড়িওয়ালা।

বছর শেষ হতে না হতে ডিসেম্বরে এসে বলেন, ‘সব কিছুর দাম বাড়ছে। ভাড়া বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।’ বছরে দুইবার কোন নিয়মে ভাড়া বাড়াচ্ছেন জানতে চাইলে মুখের ওপর বলে দেন, ‘না পারলে অন্যখানে দেখেন। এত কৈফিয়ত দিতে পারব না।

’ বাড়িওয়ালার এমন কথায় অপমানবোধ থেকে শুধু বাসাই নয়, পাড়াও বদলে ফেলেন এ ভাড়াটিয়া।

শুধু সোহাইলের বেলায়ই নয়, বাসা ভাড়া নিয়ে বাড়িওয়ালাদের স্বেচ্ছাচারী আচরণের স্বীকার হওয়ার ঘটনা সিলেটে নিয়মিতই ঘটে। বাড়িওয়ালাদের বড় অংশই ভাড়াটিয়াদের ন্যূনতম সম্মানটুকু দেখায় না। ভাড়াটিয়ারা বলছে, গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম কিংবা যেকোনো অসিলা পেলেই ভাড়া বাড়াতে তৎপর হয়ে ওঠে তারা।

এ ক্ষেত্রে তাদের কথাই শেষ কথা, এখানে কোনো নিয়ম-নীতি বা যুক্তিতর্কের অবকাশ নেই। অন্তত ছয়জন ভাড়াটিয়া অভিযোগ করে বলেছে, বাড়িওয়ালাদের আচরণে মনে হয় যেন দয়া করে থাকতে দিয়েছে।

নগরের দাঁড়িয়াপাড়া এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি যে বাসায় থাকি সেখানে প্রথমে দ্বিতীয় তলায় থাকতাম। এখন মালিক নিজে দোতলায় থাকবেন ঠিক করায় আমার পরিবারকে নিচের তলায় চলে যেতে বলেন। পছন্দমতো বাসা না পাওয়ায় আপাতত তাই নিচতলায় উঠেছি।

দ্বিতীয় তলায় বড় বড় তিনটি কক্ষ ছিল। নিচতলায় দুটি কক্ষ, তাও তুলনামূলক ছোট। কিন্তু দ্বিতীয় তলার সমপরিমাণ ভাড়াই দিতে হচ্ছে। ভাড়া কিছু কমাতে বলেছিলাম; কিন্তু তিনি তা না করে বরং সুবিধার কথা তুলে ধরে বললেন, আপনার তো সুবিধাই হলো এখন আর কষ্ট করে সিঁড়ি ভাঙতে হবে না।’

বাসা ভাড়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহায় ব্যাচেলররা। বাসা ভাড়া চাইতে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের পত্রপাঠ বিদায় করে দিতে চায় বাড়ির মালিকরা। যারা একটু শিথিল, তারা বাসা ভাড়া দেওয়ার আগে দীর্ঘ সাক্ষাত্কার নেয়। শহরের আকবর অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের কর্মকর্তা মিজান আলী নগরের রায়নগর এলাকায় সহকর্মীদের নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাচেলর শুনলে কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না। যারা দেয়, তারা নানা ধরনের অদ্ভুত প্রশ্ন করে, নানা ধরনের নিয়ম-কানুন জুড়ে দেয়।’ তিনি জানান, মাঝখানে গ্যাসের দাম বাড়ার অজুহাতে মালিকপক্ষ এক হাজার টাকা বাড়িয়ে নিয়েছে। মালিকপক্ষ ভাড়া বাড়ালেও কথা বলে তেমন একটা লাভ হয় না। তাদের ভাবভঙ্গি এমন যে ভালো লাগলে থাকো, না হলে রাস্তা মাপো।

বাসা ভাড়া বাড়াতে তত্পর থাকলেও বাসার কোনো ফিটিংস নষ্ট হলে সেগুলো সারিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের চরম অনীহা কাজ করে। নগরের লিচুবাগান এলাকার এক ভাড়াটিয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি সাত বছর ধরে আছি একটি বাসায়। অথচ বাথরুমের ফিটিংস থেকে শুরু করে দরজার ছিটকিনি পর্যন্ত কিছু নষ্ট হলে নিজ খরচে লাগাতে হয়। বাড়িওয়ালাকে বললে, উল্টো সে আদেশ-উপদেশ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।’

এলাকাভেদে বাসা ভাড়ার তারতম্য রয়েছে। নগরের হাউজিং এস্টেট, জালালাবাদ আবাসিক এলাকা, বনশ্রী, ঘূর্ণি আবাসিক এলাকা, চৌহাট্টা, দরগামহল্লা, মীরের ময়দান, উপশহরে বাসা ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস ও যোগাযোগব্যবস্থার সুবিধার জন্য এসব এলাকায় বাসার চাহিদা বেশি থাকে। তাই মালিকরা ইচ্ছামতো ভাড়া হাঁকে। ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কোনো সংস্থার কোনো নীতিমালা নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৮ বছরে সিলেট নগরে বাসা ভাড়া প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। নগরের ঘূর্ণি আবাসিক এলাকায় একটি বহুতল ভবনে তিন রুমের এক ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন মিসবাহ উদ্দিন আহমদ। এর ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। মিসবাহ বলেন, ‘৯৯ সাল থেকে সিলেটে বাসা ভাড়া করে থাকছি। সেই সময় এ রকম আকারের একটি সাধারণ বাসা সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় পাওয়া যেত।’

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী নিউজচেম্বারকে বলেন, ‘আমি মনে করি এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের নজর দেওয়া উচিত।’ তাঁর মতে, ‘কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভাড়াটিয়ারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশির ভাগ মালিক ভাড়া নিয়ে রসিদ দেয় না। যে কারণে কর ফাঁকি দেওয়া যাচ্ছে সহজে। এ বিষয়ে আয়কর বিভাগেরও নজর দেওয়া দরকার।’

তবে এ বিষয়ে আপাতত কিছু করার নেই বলে জানালেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে সিটি করপোরেশনের করার কিছু নেই। বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কোনো আইন নেই। ঢাকায় সিটি করপোরেশনগুলোই এ বিষয়ে তেমন কিছু করতে পারেনি। আমাদের তো জনবলও কম।’ তবে বাসা ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের বিষয়টি মেনে নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাড়াটিয়া বা ভুক্তভোগীদের এ বিষয়ে আরো সোচ্চার হতে হবে। বিভিন্ন ফোরাম থেকেও দাবি তুলতে হবে। সরকারের কাছে বিষয়টি যথাযথভাবে তুলে ধরা দরকার।’

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

March 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31