সর্বশেষ

» দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে দুকূল হারাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭. জুন. ২০২২ | মঙ্গলবার

চেম্বার ডেস্ক : 

দেশে অশান্তি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ মুহূর্তে কেউ কোনো অশান্তি তৈরি করতে চাইলে একূল ওকূল দুকূল হারাতে হবে। এটা তাদের মনে রাখতে হবে।

আজ মঙ্গলবার (৭ জুন) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

দীর্ঘ আলোচনায় ৬ দফার পটভূমি, ইতিহাস ও ফলাফল তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় দফা দাবি আমাদের জন্য ছিল ম্যাগনাকার্টা। ৭০-এ যে নির্বাচন, তা ছিল ছয় দফার ভিত্তিতেই। যখনই ছয় দফা নিয়ে আলোচনা হতো, বাবা (শেখ মুজিব) বলতেন, ছয় দফা মানেই এক দফা; ‘স্বাধীনতা’।

এসময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক চিত্র তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে বিশ্বের বড় বড় দেশ অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খাচ্ছে। উন্নত দেশ ইংল্যান্ডে মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ, আমেরিকায় যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ১ শতাংশের বেশি হতো না, সেখানে এখন ১০ শতাংশ। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। ইংল্যান্ডে যারা তিনবেলা খেতো, তারা একবেলা খাবার কমিয়ে দিয়েছে। তাদের সীমিত বিদ্যুৎ ব্যবহার, এক লিটারের বেশি ভোজ্যতেল না কেনার মতো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতি ১৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে, সেসব দেশেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।

তিনি বলেন, আমরা ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য যতটুকু পারছি নিয়ন্ত্রণে রাখছি। আমাদের রিজার্ভ প্রায় ৪৮ বিলিয়নে তুলেছিলাম। আজ সেই রিজার্ভের টাকা ভেঙে ভেঙে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কৃষি ও স্বাস্থ্যের জন্য ভর্তুকি এবং সহযোগিতা দিচ্ছি। এভাবে কোনো দেশ করেনি। তারপরও যদি কেউ গোলমাল করার চেষ্টা করে, আর তাতে যদি দেশটা একেবারে স্থবির হয়ে যায়, সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে?

তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের মানুষ অনেক ভালো আছে। তারা যেন ভালো থাকে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। সবাইকে বলছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। বিশ্বব্যাপী যে খাদ্যাভাব, মন্দা; সেখানে আমাদের মাটি আছে মানুষ আছে, আমাদের ফসল ফলাতে হবে। নিজের খাবারের ব্যবস্থা নিজেরাই করবো। এটাই বাস্তবতা।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন তো বন্ধ হয়নি। আমরা প্রণোদনা দিয়েছি। ভর্তুকি দিয়ে গার্মন্টস শ্রমিকদের মোবাইলে বেতন দিয়েছি। মালিকদের হাতে তো দিইনি। আজ যদি তারা বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করেন, আর এতে যদি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তো গার্মেন্টস কারখানাগুলোই বন্ধ হয়ে যাবে। তখন তো আমও যাবে, ছালাও যাবে। বেতন আর বাড়বে না। তখন চাকরিই চলে যাবে। ঘরে ফিরে যেতে হবে। তখন কী করবে?

পোশাককর্মীদের আন্দোলনে উসকানি বিষয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, এ আন্দোলনে যে নেতারা উসকানি দিচ্ছেন, কাদের প্ররোচনায় এ উসকানি, সেটাও ভেবে দেখতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, উন্নত দেশগুলোতে আমরা গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করি। এখন আমরা (বাংলাদেশ) এ খাতে একটা ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি, ভালো আছি। কিন্তু যারা গার্মেন্টস পণ্য কিনবে তাদের ক্রয়ক্ষমতা তো কমে যাচ্ছে। তাদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সে তুলনায় বাংলাদেশে এখনো মানুষকে আমরা খাদ্য, ওষুধ ও ভ্যাকসিন দিয়ে যাচ্ছি। তারপরও যদি কেউ কোনো অশান্তি তৈরি করতে চায়, তাহলে কিন্তু একূল ওকূল দুকূল হারাবে। এটাও যেন সবাই মনে রাখে।

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও কথায় দেশে অশান্তি তৈরি করলে নিজেরও ক্ষতি, দেশেরও ক্ষতি। উসকানি দিয়ে যারা পোশাক শ্রমিকদের রাস্তায় নামায় তারা তো টাকা পায়। শ্রমিক আর মালিক তো পায় না।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ যুদ্ধ সহজে থামবে না মনে হয়। যুদ্ধের প্রভাবে আমদানি ব্যয় বাড়ছে। জিনিসের দাম তো বাড়বেই। আরও কত বাড়বে ঠিক নেই। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার। কিন্তু আমরা কতটুকু ভর্তুকি দেবো? এজন্য সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। কোনো খাদ্য অপচয় যেন না হয়। প্রত্যেককেই সঞ্চয়ী হতে হবে।

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে একটু সচেতন থাকা দরকার। সীতাকুণ্ডে এরকম একটা ঘটনা (কেমিক্যাল কনটেইনার বিস্ফোরণ) ঘটলো, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা ২৫ তারিখ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবো। নিজের অর্থায়নে এ সেতু করেছি।

তিনি হাসতে হাসতে দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, একজনও মাস্ক পরেনি। যারা মাস্ক পরেনি, তাদের ফাইন করা হবে।

আলোচনা সভায় ছয় দফার ওপর বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও দলটির শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ। এসময় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930